Comilla Express

সৌদিতে নিহত জামাল মিয়ার পরিবারে শোক

মুরাদনগর
Spread the love

সৌদি আরবে নিহত কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মাহুতিকান্দা গ্রামের জামাল মিয়া তাঁর পরিবারকে রেখে গেছেন গভীর শোক এবং অসহায়ত্বের মধ্যে। রবিবার জামালের মৃত্যুর খবর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তীব্র দুঃখের ছায়া ফেলেছে। জামাল মিয়া, যিনি মৃত গণি মিয়ার পুত্র, ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য। ২০১৯ সালে পরিবারের উন্নতির জন্য সৌদি আরব যান তিনি, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২ অক্টোবর মারা যান।

নিহতের স্ত্রী ফাতেমা বেগম জানান, জামাল সৌদি আরবে যাওয়ার আগে পরিবারকে স্বচ্ছলতার পথে নিয়ে যেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন। কিন্তু সৌদি আরবে বিভিন্ন প্রতিকূলতা ও চিকিৎসার খরচের কারণে সংসারের হাল ধরতে পারেননি। ফাতেমা কান্নায় ভেঙে পড়েন, বলেন, “আমাদের দীন-দুঃখী জীবন আবারও কিভাবে চলবে? জামালের বাবা মারা গেছেন, এখন আমি কী করবো?”

জামাল মিয়ার মা, ৭৬ বছর বয়সী মোমেনা খাতুন, তাঁর একমাত্র ছেলের মৃত্যুর বেদনায় কাতর হয়ে পড়েছেন। তিনি বারবার তাঁর বুকের ধন জামালকে ফিরে পেতে সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছেন। “কে আমার জামালকে ফিরিয়ে দেবে?”—এমন আর্তনাদে পুরো গ্রামটির বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।

জামালের দুটি ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে। মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসী, যিনি ২০২৫ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী, বলেন, “বাবা আমাকে বলেছিলেন, আমি ভালো লেখাপড়া করলে তিনি আমাকে একটি মোবাইল ফোন কিনে দেবেন।” কিন্তু এখন সে জানে না বাবার সঙ্গে তার আর কোনো কথা হবে না। অপর দুই ভাই, সালাউদ্দিন (১০) ও সাব্বির (৭), বাবাকে হারানোর শোক বুঝতে না পেরে মায়ের কাছে বারবার প্রশ্ন করছে কেন তিনি কাঁদছেন।

এখন জামাল মিয়ার পরিবার কিভাবে বাঁচবে, এই প্রশ্ন তাঁদের মাঝে ভেসে উঠছে। ফাতেমা জানান, জামাল সৌদি আরবে যাওয়ার পর তাঁদের অনেক দেনা হয়ে গেছে। জামালের মৃত্যুর পর সংসার চালানোর জন্য কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি।

মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন জানান, তিনি এই বিষয়টি জানেন এবং জামাল মিয়ার লাশ দ্রুত দেশে আনার জন্য আইনগত প্রক্রিয়া চলছে। উপজেলা প্রশাসন সম্ভাব্য সহায়তা প্রদান করবে। তবে, এই শোকের মুহূর্তে পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।