কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকার বিভিন্ন খালে স্যুয়ারেজ এবং গৃহস্থালীর তরল বর্জ্যের কারণে প্রাণী ও মৎসকূল বিলীনের পাশাপাশি ফসলী জমি পতিত জমিতে পরিণত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরীক্ষা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
কৃষক সমবায় ঐক্য পরিষদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার পরিবেশ অধিদপ্তরকে কুমিল্লা ইপিজেড এর সিইটিপি (সাধারণ বর্জ্য শোধনাগার) এর পরিশোধিত তরল বর্জ্য এবং কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের খালের স্যুয়ারেজ ও গৃহস্থালীর তরল বর্জ্যের গুণগত মান পরীক্ষা করার নির্দেশ দেন।
২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রতিনিধিদল কুমিল্লা এসে সিটি কর্পোরেশনের খাল ও ইপিজেড সীমানার বাইরের কয়েকটি পয়েন্ট থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে। পরীক্ষার পর দেখা যায়, খালের পানি দূষিত হয়ে প্রাণী ও মৎসকূলের জন্য অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। পরীক্ষার রিপোর্টে সাসপেন্ডেড সলিডস, দ্রবীভূত অক্সিজেন, রাসায়নিক অক্সিজেনের চাহিদা, অ্যামোনিয়া নাইট্রোজেন, ফসফেট ও অন্যান্য দূষিত উপাদানের মাত্রা পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ অনুযায়ী নির্ধারিত মানের চেয়ে অনেক বেশি পাওয়া গেছে।
পরীক্ষার ফলাফলে রেইসকোর্স খালের পানিতে COD (রাসায়নিক অক্সিজেনের চাহিদা) পাওয়া গেছে ২২৯, যা ৫০-১২৫ এর মধ্যে থাকার কথা ছিল, এবং BOD (জৈবিক অক্সিজেনের চাহিদা) রেইসকোর্সে ৪৯.৩ পাওয়া গেছে, যা ৬-৩০ এর মধ্যে থাকার কথা। অ্যামোনিয়া নাইট্রোজেন (NH3-N) রেইসকোর্সে ৩৭.৫ পাওয়া গেছে, যার মান ০.৩ এর নিচে থাকা উচিত। এসব তথ্য থেকে স্পষ্টভাবে জানা গেছে যে, সিটি কর্পোরেশনের স্যুয়ারেজ ও গৃহস্থালীর তরল বর্জ্যের কারণে খালের পানি অত্যন্ত দূষিত এবং সেখানে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী বেঁচে থাকতে পারছে না।
এ বিষয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সচিব মোহাম্মদ মামুন জানান, তিনি ১৬ ফেব্রুয়ারিতে সিটি কর্পোরেশনে যোগদান করেছেন এবং এ বিষয়ে তেমন কিছু জানেন না।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সামছুল আলম বলেন, “খালের পানির নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আমাদের পক্ষে রয়েছে। প্রাণী ও মৎসকূল বিলীন হওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।”
এদিকে, কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজীব বলেন, “খালের পানির নমুনা পরীক্ষায় প্রাণী ও মৎসকূল বিলীন হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।”
এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, “সিটি কর্পোরেশনকে দ্রুত স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, “আইন শৃঙ্খলা সভায় সিটি কর্পোরেশনকে দ্রুত স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।”